শিক্ষা সনদ জালিয়াতি
সোনালির সিইও রাশেদের নিয়োগ বাতিল করেছে আইডিআরএ
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বরখাস্তকৃত ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানের আগাম নিয়োগ অনুমোদন বাতিল করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। গত ২৮ মার্চ ২০২৪ সোনালি লাইফের চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরিত আইডিআরএ’র পরিচালক আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে (যার স্মারক নং ৫৩.০৩.০০০০.০৩২.১১.০১০.১৯.৪৬) রাশেদের নিয়োগ অনুমোদন বাতিলের কথা জানায় আইডিআরএ। এর আগে বয়সের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে আইডিআরএ রাশেদ বিন আমানকে সিইও (সিসি) পদে ২ বছর ৮ মাস এবং একই সঙ্গে পূর্ণ সিইও পদে ৩ বছরের অগ্রিম নিয়োগ অনুমোদন দেয়। সে সময়ে তার নিয়োগ অনুমোদন পত্রে স্বাক্ষর করেন আইডিআরএ তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম।
সিইও পদে থাকা অবস্থায় ফাতেমা তামান্না সুইটি নামে কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মচারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান রাশেদ বিন আমান। পরে ওই কর্মচারীকে বিয়েও করেন। বিষয়টিকে সিইওর নৈতিক স্খলনের পাশাপাশি কোম্পানির আইন ভঙ্গ হিসেবে দেখছে তদন্ত কমিটি। কারণ সিওই হিসেবে অধীনস্থ কর্মচারীর সঙ্গে এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া সোনালী লাইফের মানবসম্পদ রীতিনীতির বিরুদ্ধ। সোনালী লাইফের একজন পরিচালক নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, ‘কোম্পানি থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থে রাশেদ বিন আমান বিলাসী জীবন যাপন করেছেন। অভিজাত একটি আবাসন কোম্পানি থেকে গুলশানে সাত হাজার বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। এটি কিনতে তার ব্যয় হয়েছে ২২ কোটি টাকা। ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দামের পোর্শে টাইকান ও ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় মার্সিডিজ জিএলই কিনেছেন। আবার কোম্পানি থেকে আত্মসাৎকৃত বিপুল অর্থ অস্ট্রেলিয়ায় পাচারও করেছেন।’ তবে কারাগারে যাওয়ার আগে আইডিআরএ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) বিভিন্ন সংস্থার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন রাশেদ বিন আমান। সে অভিযোগপত্রে তিনি সোনালী লাইফের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের অভিযোগ তোলেন। শিল্প উদ্যোক্তা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মেয়ের জামাই ছিলেন রাশেদ বিন আমান।
খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, ভূয়া শিক্ষা সনদ ও কর্মঅভিজ্ঞতা সনদ, রাশেদ বিন আমানের বয়স ৩৮ হওয়ার পরেও সিইও (সিসি) হিসেবে আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি তাকে অগ্রিম মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন দিয়ে বীমা খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন ও সাবেক পরিচালক (উপসচিব) মো. শাহ আলম সিন্ডিকেট। এই নিয়োগ অনুমোদন পেতে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, তৎকালীন আইডিআরএ’র সাবেক পরিচালক মো. শাহ আলম এর বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে এসব অপকর্মের মূলোৎপাটন করতে পারলে বর্তমানে আইডিআরএ দায়িত্বরত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ইমেজ ফিরবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
পাশাপাশি বীমা আইন ২০১০ এর অপরাধ ও দন্ড অধ্যায়ের ধারা ১৩১-এ দলিল, বিবরণী, হিসাব, রিটার্ন ইত্যাদিতে মিথ্যা তথ্য প্রদানের কারণে অনধিক ৩ বছরের কারাদন্ড অথবা ৫ লাখ টাকা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা আছে। বীমা আইনে রাশেদ বিন আমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে, রাশেদের মত আর কেউ শিক্ষাসনদ জালিয়াতি করে আইডিআরএ বরাবর দাখিলের সাহস পাবে না বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।