ঢাকা ০৯:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জসিমের ‘কেলেঙ্কারির’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থার তথ্য জানতে চায় আইডিআরএ Logo নাসিরনগরে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অসত্য, বিভ্রান্তিকর সংবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ Logo স্ত্রীর গলা কেটে হত্যাচেষ্টা, স্বামীকে পুলিশে দিলেন স্থানীয়রা Logo গৃহায়ন সংকট নিরসনে প্রকৌশলী জোয়ারদার তাবেদুন নবী’র ভূয়সী উদ্যোগ Logo রাজধানীতে আবারও চিরচেনা যানজট Logo কলেজছাত্রীর আপত্তিকর ভিডিও, গ্রেপ্তার ১ Logo মামুনুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা Logo চৌদ্দগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন Logo শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশ স্বল্পোন্নত হতে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে Logo কুমিল্লায় রোহিঙ্গাকে জন্ম নিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগে ইউপি সচিব গ্রেফতার

সংখ্যার আদি নিদর্শন ও সংখ্যার স্থপতি

মো. তাহমিদ রহমান:

সংখ্যার ব্যবহার যে আসলে কবে শুরু হয়েছিল সেটা একটা রহস্য। কে কোথায় কবে সংখ্যা আবিষ্কার করেছিল

তা বলা মুশকিল। তবে ধারণা করা হয় আদি মানব নিজেদের প্রয়োজনে গণনার চেষ্টা থেকেই সংখ্যার আবিষ্কার
করেছে। নৃতাত্ত্বিকদের মতে প্রায় 20 লক্ষ বছর পূর্বে মানব জীবনের উৎপত্তি ঘটে। মানুষ তখন বসবাস
করত বনে জঙ্গলে পাহাড়ের গুহায়। সভ্যতার ছোঁয়া থেকে মানুষ তখন ছিল দুরহস্ত। আধুনিক সভ্য মানবের মত জীবন এত সহজ ছিল না। যখন থেকে সভ্যতার বিবর্তন ঘটা শুরু করল ঠিক তখন থেকেই ভাব প্রকাশ, হিসাব-নিকাশ নানা ক্ষেত্রে সংখ্যার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। জন্ম লগ্ন থেকে গণনার বিষয়টি তথা সংখ্যা পদ্ধতি এতোটা উন্নত ছিল না। বেলজিয়াম প্রত্নতত্ত্ববিদ জিন ডি হ্যানজেলিন ডি ব্রাউকোর্ট ১৯৬০ সালে আফ্রিকার কঙ্গোর ফিশারমেন সেটেলমেন্ট এর সেমলিকি নদীর তীরবর্তী এলাকায় বেবুনের হাজার বছরের পুরনো একটি হাঁড় খুঁজে পান। যাতে বেশ কিছু পরিকল্পিতভাবে খোদাই করা দাগ দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো দেখে
বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন যে দাগগুলো সংখ্যা গণনার হিসাব রাখার জন্য খোদাই করা হয়েছিল। এই হাঁড়টি
ISHANGO BONES নামে পরিচিত যা সংখ্যা পদ্ধতির আদি নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এই হাঁড়টি ২৫,০০০ বছর আগের বলে দাবি করেন। বেঁবুনের এই হাঁড়টি দৈর্ঘ্য দশ সেন্টিমিটার, গারো বাদামী রঙের এই হাঁড়টির এক প্রান্তে কোয়ার্টসের একটি ধাঁরালো টুকরা লাগানো রয়েছে। অনেকেই এই হাঁড়ের খোঁদাই করা দাগগুলোকে ট্যালি চিহ্ন হিসেবে অভিহিত করেন। বিজ্ঞানীরা মনে করে হাঁড়টি চন্দ্র পঞ্জিকার
উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এটি হলো মানবজাতির প্রাচীনতম গাণিতিক হাতিয়ার।

চিত্র: বেবুনের হাঁড় (ISHANGO BONES) ছবিসূত্র: www.How Mathematics Happened: The First 50,000 Years
Ishango Bones এর উপর অঙ্কিত ১৬৮ টি চিহ্ন বা দাগাঙ্কিত রেখা হারের দৈর্ঘ্য বরাবর তিনটি সমান্তরাল
কলামে সাজানো।প্রতিটি কলামে দৈর্ঘ্য ও অভিযোজন ভিন্ন বিন্যাসে সজ্জিত করা। প্রথম কলামটি হাঁড়ের
সবচেয়ে বাঁকাদিক বরাবর যা M কলাম নামে পরিচিত। বাম এবং ডান দিকের কলামগুলোকে যথাক্রমে G এবং D
নামে অভিহিত করা হয়। সমান্তরাল চিহ্নগুলি বিভিন্ন tantalizing অনুমানের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ
এগুলো দশমিক সংখ্যার ইঙ্গিত বহন করে। তবে অনেক গণিতবিদ অভিমত দেন যে এটি সহজতম কোন গাণিতিক
সংখ্যা পদ্ধতি তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। হাড়ের আবিষ্কারক “জিন ডি হ্যানজেলিন ডি

ব্রাউকোর্ট” চিহ্নগুলোকে সরল পাটিগণিতের প্রমাণক হিসেবে মত দেন। গণিতবিদ পিটার এস রুডম্যান ধারণা
করেন সংখ্যাগুলো ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব্দে গ্রীক সময়কালের। গণিতবিদ ডার্ক হুইলব্রুক এর মতে ISHANGO
BONES হল এমন একটি গণনা যন্ত্র যার বেস হলো 12 সাববেস হলো 3 এবং 4। এটি দ্বারা সরল গুণের কাজ
সম্পাদন করা হতো। নৃবিজ্ঞানী ক্যাডেল অ্যাভারেট হাঁড়ের অন্তদৃষ্টি ব্যাখ্যায় বলেন যে- চিহ্নের গ্রুপগুলিতে
যে পরিমাণ সংখ্যা গুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেগুলি স্পষ্ট প্রাগৈতিহাসিক সংখ্যার প্রমাণ।
চিত্র: ”নিদর্শন এর চিহ্নসমূহের ব্যাখ্যা”

পূর্ণ সংখ্যার সংস্করণ ও হিন্দু- আরবীয় সংখ্যার বিকাশে অনবদ্য ভূমিকার জন্য
ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্টকে সংখ্যা পদ্ধতির জনক বা স্থপতি
হিসেবে অভিহিত করা হয়। গ্রীক দার্শনিক থেলস্(Thales) সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংখ্যা
প্রকাশ করেন। থেলস্ ই প্রথম সংখ্যার বিজ্ঞান চর্চা শুরু করেন। প্রথম জীবনে থেলস্ একজন ব্যবসায়ী
ছিলেন এবং ব্যবসার মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন, শেষ জীবনে জ্ঞান অর্জন এবং পরিভ্রমণের
মাধ্যমে এই অর্থ তিনি ব্যয় করেন। মিশরে অবস্থান কালে ছায়ার সাহায্যে পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করে
সাধারনের প্রশংসা ভাজন হন। মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, সেই সময় তিনি পিরামিডের ছায়া
মেপে তার উচ্চতা নির্ণয় করেন। থেলস্ ই প্রথম ব্যক্তি যার নামের সাথে গণিত শাস্ত্রের বিভিন্ন আবিষ্কার
জড়িত। প্রাচীনকালের সাতজন মহাজ্ঞানী ব্যক্তির মধ্যে থেলস্ একজন। তাকে গ্রীস জ্যোতিষশাস্ত্র,
জ্যামিতি ও পাটিগণিতের জনক বলা হয়। সংখ্যা পদ্ধতির ইতিহাসে থেলস্ প্রবর্তিত চিন্তাধারা এক নতুন
জ্ঞানের জগতের দ্বার উন্মোচিত করে।
লেখক:
প্রভাষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি)
নূরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজ, লাকসাম, কুমিল্লা।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Dainik Renaissance

আমাদের ওয়েসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আপনাদের আশে পাশের সকল সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন
আপডেট সময় ০৭:১০:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
১০৬ বার পড়া হয়েছে

সংখ্যার আদি নিদর্শন ও সংখ্যার স্থপতি

আপডেট সময় ০৭:১০:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

সংখ্যার ব্যবহার যে আসলে কবে শুরু হয়েছিল সেটা একটা রহস্য। কে কোথায় কবে সংখ্যা আবিষ্কার করেছিল

তা বলা মুশকিল। তবে ধারণা করা হয় আদি মানব নিজেদের প্রয়োজনে গণনার চেষ্টা থেকেই সংখ্যার আবিষ্কার
করেছে। নৃতাত্ত্বিকদের মতে প্রায় 20 লক্ষ বছর পূর্বে মানব জীবনের উৎপত্তি ঘটে। মানুষ তখন বসবাস
করত বনে জঙ্গলে পাহাড়ের গুহায়। সভ্যতার ছোঁয়া থেকে মানুষ তখন ছিল দুরহস্ত। আধুনিক সভ্য মানবের মত জীবন এত সহজ ছিল না। যখন থেকে সভ্যতার বিবর্তন ঘটা শুরু করল ঠিক তখন থেকেই ভাব প্রকাশ, হিসাব-নিকাশ নানা ক্ষেত্রে সংখ্যার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। জন্ম লগ্ন থেকে গণনার বিষয়টি তথা সংখ্যা পদ্ধতি এতোটা উন্নত ছিল না। বেলজিয়াম প্রত্নতত্ত্ববিদ জিন ডি হ্যানজেলিন ডি ব্রাউকোর্ট ১৯৬০ সালে আফ্রিকার কঙ্গোর ফিশারমেন সেটেলমেন্ট এর সেমলিকি নদীর তীরবর্তী এলাকায় বেবুনের হাজার বছরের পুরনো একটি হাঁড় খুঁজে পান। যাতে বেশ কিছু পরিকল্পিতভাবে খোদাই করা দাগ দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো দেখে
বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন যে দাগগুলো সংখ্যা গণনার হিসাব রাখার জন্য খোদাই করা হয়েছিল। এই হাঁড়টি
ISHANGO BONES নামে পরিচিত যা সংখ্যা পদ্ধতির আদি নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এই হাঁড়টি ২৫,০০০ বছর আগের বলে দাবি করেন। বেঁবুনের এই হাঁড়টি দৈর্ঘ্য দশ সেন্টিমিটার, গারো বাদামী রঙের এই হাঁড়টির এক প্রান্তে কোয়ার্টসের একটি ধাঁরালো টুকরা লাগানো রয়েছে। অনেকেই এই হাঁড়ের খোঁদাই করা দাগগুলোকে ট্যালি চিহ্ন হিসেবে অভিহিত করেন। বিজ্ঞানীরা মনে করে হাঁড়টি চন্দ্র পঞ্জিকার
উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এটি হলো মানবজাতির প্রাচীনতম গাণিতিক হাতিয়ার।

চিত্র: বেবুনের হাঁড় (ISHANGO BONES) ছবিসূত্র: www.How Mathematics Happened: The First 50,000 Years
Ishango Bones এর উপর অঙ্কিত ১৬৮ টি চিহ্ন বা দাগাঙ্কিত রেখা হারের দৈর্ঘ্য বরাবর তিনটি সমান্তরাল
কলামে সাজানো।প্রতিটি কলামে দৈর্ঘ্য ও অভিযোজন ভিন্ন বিন্যাসে সজ্জিত করা। প্রথম কলামটি হাঁড়ের
সবচেয়ে বাঁকাদিক বরাবর যা M কলাম নামে পরিচিত। বাম এবং ডান দিকের কলামগুলোকে যথাক্রমে G এবং D
নামে অভিহিত করা হয়। সমান্তরাল চিহ্নগুলি বিভিন্ন tantalizing অনুমানের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ
এগুলো দশমিক সংখ্যার ইঙ্গিত বহন করে। তবে অনেক গণিতবিদ অভিমত দেন যে এটি সহজতম কোন গাণিতিক
সংখ্যা পদ্ধতি তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। হাড়ের আবিষ্কারক “জিন ডি হ্যানজেলিন ডি

ব্রাউকোর্ট” চিহ্নগুলোকে সরল পাটিগণিতের প্রমাণক হিসেবে মত দেন। গণিতবিদ পিটার এস রুডম্যান ধারণা
করেন সংখ্যাগুলো ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব্দে গ্রীক সময়কালের। গণিতবিদ ডার্ক হুইলব্রুক এর মতে ISHANGO
BONES হল এমন একটি গণনা যন্ত্র যার বেস হলো 12 সাববেস হলো 3 এবং 4। এটি দ্বারা সরল গুণের কাজ
সম্পাদন করা হতো। নৃবিজ্ঞানী ক্যাডেল অ্যাভারেট হাঁড়ের অন্তদৃষ্টি ব্যাখ্যায় বলেন যে- চিহ্নের গ্রুপগুলিতে
যে পরিমাণ সংখ্যা গুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেগুলি স্পষ্ট প্রাগৈতিহাসিক সংখ্যার প্রমাণ।
চিত্র: ”নিদর্শন এর চিহ্নসমূহের ব্যাখ্যা”

পূর্ণ সংখ্যার সংস্করণ ও হিন্দু- আরবীয় সংখ্যার বিকাশে অনবদ্য ভূমিকার জন্য
ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্টকে সংখ্যা পদ্ধতির জনক বা স্থপতি
হিসেবে অভিহিত করা হয়। গ্রীক দার্শনিক থেলস্(Thales) সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংখ্যা
প্রকাশ করেন। থেলস্ ই প্রথম সংখ্যার বিজ্ঞান চর্চা শুরু করেন। প্রথম জীবনে থেলস্ একজন ব্যবসায়ী
ছিলেন এবং ব্যবসার মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন, শেষ জীবনে জ্ঞান অর্জন এবং পরিভ্রমণের
মাধ্যমে এই অর্থ তিনি ব্যয় করেন। মিশরে অবস্থান কালে ছায়ার সাহায্যে পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করে
সাধারনের প্রশংসা ভাজন হন। মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, সেই সময় তিনি পিরামিডের ছায়া
মেপে তার উচ্চতা নির্ণয় করেন। থেলস্ ই প্রথম ব্যক্তি যার নামের সাথে গণিত শাস্ত্রের বিভিন্ন আবিষ্কার
জড়িত। প্রাচীনকালের সাতজন মহাজ্ঞানী ব্যক্তির মধ্যে থেলস্ একজন। তাকে গ্রীস জ্যোতিষশাস্ত্র,
জ্যামিতি ও পাটিগণিতের জনক বলা হয়। সংখ্যা পদ্ধতির ইতিহাসে থেলস্ প্রবর্তিত চিন্তাধারা এক নতুন
জ্ঞানের জগতের দ্বার উন্মোচিত করে।
লেখক:
প্রভাষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি)
নূরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজ, লাকসাম, কুমিল্লা।